Winter eczema শীতকালের একজিমা

শীতকালের একজিমা : সহজ ভাষায় হোমিওপ্যাথি গাইড

শীত পড়লেই অনেকের ত্বক খুব শুকিয়ে যায়, ফেটে যায়, চুলকায় এবং লাল লাল দাগ বের হয়। এই সমস্যাকেই শীতকালের একজিমা বলা হয়। ত্বক শুকিয়ে গেলে তার স্বাভাবিক তেল কমে যায় এবং তখন ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

হোমিওপ্যাথি এই সমস্যায় ভেতর থেকে কাজ করে এবং দীর্ঘদিনের জন্য আরাম দেয়।

একজিমা কী এবং কেন হয়

একজিমা হলো ত্বকের প্রদাহ—যেখানে ত্বক লাল হয়, চুলকায়, খোসা ওঠে বা পানি বের হয়।

শীতকালে এর প্রধান কারণ হলো—

  • বাতাসে আর্দ্রতা কম

  • বারবার গরম পানি ব্যবহার

  • শরীরের তেল কমে যাওয়া

  • ঠান্ডা ও ধুলা

  • মানসিক চাপ
    এগুলো ত্বককে আরও শুষ্ক ও দুর্বল বানায়।

উপসর্গ

  • খুব চুলকানি

  • লাল দাগ

  • ত্বক শুষ্ক ও খসখসে

  • ফাটল ধরে ব্যথা

  • কখনো পানি বা পুঁজ বের হওয়া

  • রাতে চুলকানি বাড়ে

  • ঠান্ডা বাতাসে সমস্যা বাড়ে

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

Sulphur – সালফার

এই ওষুধ শুকনো, লাল, গরম লাগে এমন একজিমার জন্য খুব ভালো। অনেক সময় মনে হবে যেন ত্বকে আগুন জ্বলছে। রাতে বিছানায় গেলে চুলকানি আরও বাড়ে—এটাই সালফারের প্রধান লক্ষণ। গরমে অসহ্য লাগে, আর গরম জলে গোসল করলে সাময়িক আরাম হয় কিন্তু পরে আবার চুলকানি বাড়ে।

সালফার ব্যবহার করা হয় সেই মানুষদের জন্য যাদের স্কিন সবসময় একটু ময়লা বা রুক্ষ থাকে এবং চুলকালেই রক্ত বের হয়ে যায়। যারা বেশি ভাবুক, একটু অবহেলাপূর্ণ এবং সবসময় কিছু না কিছু চিন্তায় থাকে—তাদের ক্ষেত্রে এটা ভালো কাজ করে।

ডোজ
30C – দিনে ১ বার
200C – সপ্তাহে ১ বার

Graphites – গ্রাফাইটস

যাদের একজিমা থেকে আঠার মতো ঘন পানি বের হয়, তাদের জন্য Graphites খুব কার্যকর। ত্বক মোটা হয়ে যায়, ফাটে এবং ফাটল থেকে পানি বা রক্ত বের হয়। বিশেষ করে ঠোঁটের কোণে, কানের পেছনে বা চোখের কাছে হলে এই ওষুধ দারুণ কাজ করে।

এই ধরনের রোগীরা সাধারণত একটু নরম স্বভাবের, সহজে চিন্তিত হয়। ঠান্ডা লাগলে বা শীতে তাদের একজিমা বেশি বেড়ে যায়। স্কিনে খোসা ও মোটা দাগ থাকা এ ওষুধের প্রধান ইঙ্গিত।

ডোজ
30C – দিনে ১ বার
200C – সপ্তাহে ১ বার

Rhus Tox – রাস টক্স

যদি একজিমা ভিজে থাকে, অর্থাৎ পানি বের হয়, লাল হয়ে ফোলাফোলা থাকে—তাহলে Rhus Tox খুব ভালো কাজ করে। ঠান্ডা বা ভেজা পরিবেশে গেলে সমস্যা বাড়ে, কিন্তু গরম সেঁক বা গরম জলে আরাম দেয়—এটাই এর বড় লক্ষণ।

রাস টক্স রোগীরা বেশ অস্থির হয়, বসে থাকতে পারে না। একটু নড়াচড়া করলে ভালো লাগে। রাতে চুলকানি বেড়ে যায় এবং শরীরে ঠান্ডা লাগলে সমস্যা খুব বাড়ে।

ডোজ
30C – দিনে ২ বার
200C – সপ্তাহে ১ বার

Mezereum – মেজেরিয়াম

যদি একজিমায় শক্ত খোসা জমে এবং খোসার নিচে সাদা বা হলুদ পুঁজ থাকে—তাহলে Mezereum খুব কার্যকর। বিশেষ করে মাথার স্ক্যাল্পে হলে, যেখানে স্কিনের মোটা খোসা জমে থাকে এবং চুল উঠতে থাকে—এটিই প্রথম পছন্দ।

এই রোগীরা সাধারণত ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না, এবং ত্বকে জ্বালা অনুভব করে। ক্ষতস্থানে গভীর চুলকানি ও ব্যথা থাকে। শীতে উপসর্গ অনেক বেড়ে যায়।

ডোজ
30C – দিনে ১ বার

Petroleum – পেট্রোলিয়াম

যাদের স্কিন শীতে খুব ফাটে, রক্ত বের হয়, আঙুলের ডগা ফেটে যায়—তাদের জন্য Petroleum সেরা। স্কিন খুব রুক্ষ, টানটান এবং ব্যথাযুক্ত হয়ে যায়। শীতের শুকনো বাতাসে এই সমস্যা ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

এই ধরনের রোগীরা সাধারণত একটু বিরক্তিভাবাপন্ন থাকে। স্কিনে রুক্ষতা ও ফাটল—Petroleum-এর স্পষ্ট লক্ষণ। হাত-পা ফাটার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে।

ডোজ
30C – দিনে ১ বার
200C – সপ্তাহে ১ বার

Calendula Q – ক্যালেন্ডুলা কিউ (বাহ্যিক ব্যবহার)

এটি ক্ষত শুকাতে, ব্যথা কমাতে ও ত্বক পরিষ্কার রাখতে দারুণ কাজ করে। যদি একজিমা ঘা হয়ে যায় বা পুঁজ বের হয়—তাহলে Calendula ব্যবহার করা উচিত।

ব্যবহার:
১০–১৫ ফোঁটা ১ কাপ জলে মিশিয়ে দিনে ২ বার ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে।

প্রতিরোধ

  • গোসলের পরই ময়েশ্চারাইজার লাগান

  • খুব গরম পানি ব্যবহার করবেন না

  • নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন

  • প্রচুর পানি পান করুন

  • শীতে স্কিন ঢেকে রাখুন

  • সুতি কাপড় পরুন

  • স্ট্রেস কমান

  • কেমিক্যাল বা ডিটারজেন্ট কম ব্যবহার করুন

আপনার স্কিনকে সুস্থ রাখার জন্য সচেতন থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শীতে একটু যত্ন নিলে একজিমা অনেকটাই কমে যায়। আরও কোনো সাহায্য বা ব্যক্তিগত পরামর্শ লাগলে আমাকে জানাতে পারেন। 🌿

Leave a Comment