অ্যালার্জিক রাইনাইটিস Allergic Rhinitis : সহজ হোমিওপ্যাথি গাইড

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস মানে হলো—ধুলো, ঠান্ডা, পোলেন, পশুর লোম বা গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ চুলকানো ইত্যাদি।
অনেকে এটাকে “অ্যালার্জির ঠান্ডা” বা “হে ফিভার”ও বলে।

হোমিওপ্যাথি এই সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে কারণ এটি মূল অ্যালার্জিক প্রবণতাকে কমায়।

কেন হয়

  • ধুলো, পোলেন, ফুলের গন্ধ

  • ঠান্ডা বাতাস বা ঠান্ডা পানি

  • পশুর লোম

  • পারফিউম বা কেমিক্যাল

  • পরিবারের মধ্যে অ্যালার্জির ইতিহাস

  • ধুলোবালি থাকা জায়গায় বেশি সময় থাকা

উপসর্গ

  • নাক দিয়ে পানি ঝরা

  • একটার পর একটা হাঁচি

  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া

  • চোখ চুলকানো / পানি পড়া

  • গলার ভিতর চুলকানি

  • মাথা ভার লাগা

  • সকালে ঘুম থেকে উঠেই বেশি সমস্যা

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

(ইংরেজি + বাংলা নামসহ, সহজ ভাষায়)

Allium Cepa – অ্যালিয়াম সেপা

যাদের নাক দিয়ে টপটপ পানি পড়ে, এবং সেই পানি নাকে জ্বালা ধরায়—তাদের জন্য এটি খুব কার্যকর। চোখ থেকে পানি পড়লেও চোখে জ্বালা হয় না, কিন্তু নাকের পানি খুব তীব্র জ্বালাপোড়া দেয়। ঠান্ডা বাতাসে বা বাইরে বের হলে সমস্যা বাড়ে।

এটি সেই লোকদের জন্য ভালো, যাদের হাঁচি একটার পর একটা আসে এবং নাক পরিষ্কার করার পরও বারবার পানি পড়ে।

ডোজ
30C – দিনে ২ বার
(তীব্র হলে ৩ বার)

Arsenicum Album – আর্সেনিকাম অ্যালবাম

যখন নাক দিয়ে খুব পাতলা পানি পড়ে কিন্তু নাকের চারপাশে জ্বালা করে, ঠান্ডা বাতাসে সমস্যা বাড়ে, এবং রোগী খুব অস্থির বোধ করে—তখন এই ওষুধ ভাল কাজ করে। রাতে বা ভোরবেলায় উপসর্গ বেশি হয়।

যারা খুব ঠান্ডা সইতে পারে না, ছোট ছোট চুমুক করে পানি খায়, এবং সবসময় একটু চিন্তায় থাকে—তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি কার্যকর।

ডোজ
30C – দিনে ১ বা ২ বার
200C – সপ্তাহে ১ বার (দীর্ঘদিনের ক্ষেত্রে)

Nux Vomica – নাক্স ভমিকা

যাদের নাক কখনো বন্ধ থাকে, কখনো পানি পড়ে—এটাই নাক্সের প্রধান লক্ষণ। রাতে বা সকালে নাক বন্ধ, আবার দিনের বেলায় একটু খুলে যায়। ঠান্ডা হাওয়ায় বের হলেই সমস্যা বাড়ে।

রাগী, তাড়াতাড়ি উত্তেজিত হয়, বেশি কাজের চাপ থাকে—এমন লোকদের ক্ষেত্রে এটি খুব উপযোগী।

ডোজ
30C – দিনে ২ বার

Sabadilla – সাবাডিলা

যদি হাঁচি থামতেই না চায় এবং চোখ নাক চুলকাতে থাকে—তাহলে Sabadilla খুব উপকারী। ফুলের গন্ধ বা ধুলা লাগলেই একদম হাঁচির ঝড় শুরু হয়।

যেসব রোগী সবসময় ঠান্ডার ভয় পায়, এবং গরম জিনিসে আরাম পায়—তাদের ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজ করে।

ডোজ
30C – দিনে ২ বার

Wyethia – উইয়েথিয়া

যাদের গলার ভিতর, তালু এবং কানে এমন চুলকানি হয় যে বারবার ঘর্ষণ করতে ইচ্ছে করে—তাদের জন্য এটি সেরা।
এটি “গলার চুলকানিযুক্ত অ্যালার্জি”তে খুব কার্যকর।

ডোজ
30C – দিনে ১–২ বার

Natrum Mur – ন্যাট্রাম মিউর

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই হাঁচি শুরু হয়—এটাই এ ওষুধের প্রধান বৈশিষ্ট্য। নাক অনেক সময় বন্ধ থাকে এবং নাকের পাশে সাদা খোসা জমে।
যারা মানসিকভাবে একটু চুপচাপ, সহজে কষ্ট পায়—তাদের ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে।

ডোজ
30C – দিনে ১ বার
200C – সপ্তাহে ১ বার

প্রতিরোধ

  • ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন

  • মাস্ক ব্যবহার করুন

  • ঠান্ডা পানি / আইসক্রিম কম খান

  • ঘর পরিষ্কার ও ধুলামুক্ত রাখুন

  • পোষা প্রাণীর লোম পরিষ্কার রাখুন

  • পর্যাপ্ত ঘুম নিন

  • হাওয়া লাগানো এড়িয়ে চলুন (বিশেষত সকালে)

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় যদি সঠিক ওষুধ ও সঠিক যত্ন নেওয়া হয়। আপনার উপসর্গ অনুযায়ী আরও ব্যক্তিগত ওষুধ জানতে চাইলে আমাকে জানাতে পারেন।

Leave a Comment