একজিমা হলো ত্বকের একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যেখানে ত্বকে চুলকানি, লালচে দাগ, শুষ্কতা বা ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে ত্বক ফেটে যায় বা পানি বের হয়। শিশু থেকে বড়—সব বয়সের মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। একজিমা সাধারণত ক্ষতিকর নয়, কিন্তু খুব অস্বস্তিকর এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
উপসর্গ (Symptoms)
একজিমার কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো—
-
ত্বকে চুলকানি, বিশেষ করে রাতে বেশি
-
লালচে দাগ বা র্যাশ
-
শুষ্ক ও খসখসে ত্বক
-
ছোট ফোস্কা বা পানি বের হওয়া
-
ত্বক ঘষে ঘষে মোটা হয়ে যাওয়া (lichenification)
-
কখনো তীব্র জ্বালা বা পোড়া ভাব
কারণ (Causes)
একজিমার সঠিক কারণ সব সময় একরকম নয়, তবে কিছু সাধারণ কারণ হলো—
-
অ্যালার্জি (ধুলো, পরাগরেণু, পশুর লোম)
-
ত্বকের সংবেদনশীলতা (সাবান, ডিটারজেন্ট, কেমিক্যাল)
-
ইমিউন সিস্টেমের অসামঞ্জস্য
-
পরিবারে একজিমা বা হাঁপানির ইতিহাস
-
স্ট্রেস ও মানসিক চাপ
-
আবহাওয়ার পরিবর্তন (শীতকালে বেশি হয়)
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা (Homeopathic Medicines for Eczema)
1. Graphites
শুষ্ক, মোটা ও ফেটে যাওয়া ত্বকে একজিমা হলে এই ওষুধ কার্যকর। ত্বক থেকে আঠালো তরল বের হয়। বিশেষ করে কান বা মাথার ত্বকে হলে ভালো কাজ করে।
ডোজ: 30C দিনে ১–২ বার।
2. Sulphur
চুলকানি ভোরবেলা বা রাতে বেশি হলে, ত্বক লাল হয়ে গেলে আর চুলকাতে চুলকাতে জ্বালা করলে Sulphur উপকারী। যারা গরম সহ্য করতে পারেন না, তাদের জন্য বিশেষ কার্যকর।
ডোজ: 30C দিনে ১ বার।
3. Rhus Toxicodendron
যদি একজিমার ফুসকুড়ি লাল হয়, ফোস্কার মতো হয় আর চুলকাতে চুলকাতে আরাম না পেয়ে রোগী বারবার নাড়াচাড়া করেন, তখন Rhus Tox কাজে আসে।
ডোজ: 30C দিনে ১–২ বার।
4. Mezereum
ফুসকুড়ি থেকে যদি ঘন তরল বের হয়, সঙ্গে পোড়া পোড়া অনুভূতি থাকে, তবে Mezereum কার্যকর। মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ায় এর ব্যবহার বেশি।
ডোজ: 30C দিনে ১ বার।
5. Petroleum
শীতকালে একজিমা বেড়ে গেলে, ত্বক ফেটে গেলে ও রক্ত বের হলে Petroleum খুব ভালো কাজ করে। শুকনো, খসখসে ও রুক্ষ ত্বকের জন্য উপযুক্ত।
ডোজ: 30C দিনে ১ বার।
6. Natrum Muriaticum
যদি একজিমা বিশেষ করে চুলের গোড়ায় বা ঠোঁটে দেখা দেয় এবং রোগীর মানসিক দুঃখ বা শোকের ইতিহাস থাকে, তবে এই ওষুধ কার্যকর।
ডোজ: 30C দিনে ১–২ বার।
7. Arsenicum Album
যদি একজিমার সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বালা থাকে এবং রোগী রাতে অস্থির হয়ে ওঠেন, তবে Arsenicum Album কাজে দেয়। বিশেষ করে শুকনো ও খসখসে একজিমায়।
ডোজ: 30C দিনে ১–২ বার।
প্রতিরোধের টিপস (Prevention Tips)
-
সাবান, ডিটারজেন্ট বা কেমিক্যাল ব্যবহার কমান
-
গরম পানিতে নয়, কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন
-
শীতকালে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
-
চুলকানি হলে আঁচড়াবেন না, এতে সংক্রমণ হতে পারে
-
তুলার কাপড় পরুন, উলের কাপড় এড়িয়ে চলুন
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
-
স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন
উপসংহার (Conclusion)
একজিমা দীর্ঘস্থায়ী হলেও নিয়মিত যত্ন ও সঠিক ওষুধে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা রোগীর উপসর্গ ও শারীরিক গঠন অনুযায়ী সঠিকভাবে বেছে নেওয়া হলে দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল দেয়। তবে মনে রাখবেন—নিজে নিজে না খেয়ে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়।