ভার্টিগো বা মাথা ঘোরা এমন এক অবস্থা যেখানে হঠাৎ করে মনে হয় চারপাশটা ঘুরছে বা দুলছে। অনেকেই এটাকে সাধারণ মাথা ঘোরা ভেবে নেন, কিন্তু আসলে এটা এক ধরনের বিশেষ অনুভূতি। দাঁড়াতে গেলে বা হাঁটতে গেলে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, কখনো চোখে ঝাপসা দেখা দেয়, আবার কখনো বমি বমি ভাব হয়। এটি আলাদা কোনো রোগ নয়, বরং শরীরের ভেতরে থাকা নানা সমস্যার একটা লক্ষণ। সাধারণত এর মূল উৎস থাকে কানে, মস্তিষ্কে বা স্নায়ুতন্ত্রে।
ভার্টিগোর লক্ষণগুলো খুবই অস্বস্তিকর। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হঠাৎ করে মাথা ঘোরা বা মনে হওয়া যে চারপাশ ঘুরছে। কেউ কেউ দাঁড়াতে বা হাঁটতে গিয়ে ভারসাম্য রাখতে পারেন না, আবার অনেকে বমি বা বমি বমি ভাব অনুভব করেন। মাথা ভারি লাগে, চোখ ঝাপসা হয়, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ হতে পারে এবং অনেক সময় মাথাব্যথাও যুক্ত হয়।
এই সমস্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। অন্তঃকর্ণের সমস্যা যেমন BPPV, মেনিয়ারের রোগ বা কানে সংক্রমণ থেকে ভার্টিগো হতে পারে। মাইগ্রেনের রোগীদের মধ্যেও এ সমস্যা দেখা যায়। আবার লো ব্লাড প্রেসার, রক্তশূন্যতা বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও মাথা ঘোরা হতে পারে। মানসিক চাপ বা হঠাৎ ভয়ের ঘটনাও ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। স্নায়বিক সমস্যার ক্ষেত্রেও ভার্টিগো একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে।
উপসর্গ (Symptoms)
ভার্টিগো হলে সাধারণত এসব লক্ষণ দেখা যায়:
-
মাথা ঘোরা, মনে হয় চারপাশ ঘুরছে
-
দাঁড়ালে বা হাঁটলে ভারসাম্য হারানো
-
মাথা ভার লাগা
-
বমি বা বমি বমি ভাব
-
চোখ ঝাপসা দেখা
-
কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ
-
অনেক সময় মাথাব্যথাও হতে পারে
কারণ (Causes)
ভার্টিগোর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:
-
অন্তঃকর্ণের সমস্যা যেমন BPPV (Benign Positional Vertigo), Meniere’s disease
-
কানে সংক্রমণ বা প্রদাহ (Labyrinthitis)
-
মাইগ্রেন
-
লো ব্লাড প্রেসার বা রক্তশূন্যতা
-
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
-
মানসিক চাপ বা ভয়
-
স্নায়বিক রোগ যেমন স্ট্রোক বা Multiple Sclerosis
🌿 Gelsemium
Gelsemium সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে যখন রোগী খুব ক্লান্ত আর দুর্বল অনুভব করেন, সঙ্গে মাথা ভারি হয়, চোখে ঝাপসা দেখা যায়। অনেকে বলেন, মনে হয় মাথায় চাপ আছে বা মেঘ জমে আছে। নার্ভাসনেস, মানসিক চাপ বা পরীক্ষার আগে টেনশনে থাকা ছাত্রছাত্রীদের মাথা ঘোরা হলে এটাও উপকারী। ওষুধটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে, উদ্বেগ কমায় আর চোখ ও মাথার ভার লাঘব করে। সাধারণত 30C শক্তি দিনে দুইবার ব্যবহার করা হয়। খুব পুরনো সমস্যায় কখনো কখনো 200C পর্যন্তও দেওয়া হয়, তবে সেটা চিকিৎসকের পরামর্শে।
🌿 Bryonia Alba
এই ওষুধটা তাদের জন্য যাদের মাথা সামান্য নড়ালেই মাথা ঘোরা বাড়ে। দাঁড়ালে, হাঁটলে বা মাথা নাড়ালেই পরিস্থিতি খারাপ হয়, কিন্তু শুয়ে থাকলে অনেকটা আরাম মেলে। Bryonia মূলত শরীরের শুকনো অবস্থা বা পানির ঘাটতির সাথে যুক্ত, তাই রোগীর প্রচণ্ড তৃষ্ণা থাকতে পারে। ওষুধটি শরীরের ভেতরের প্রদাহ ও টেনশন কমাতে সাহায্য করে। সাধারণ ডোজ 30C দিনে ২ বার।
🌿 Belladonna
হঠাৎ তীব্র মাথা ঘোরা, চোখ লাল হওয়া, মাথাব্যথা এবং অনেক সময় আলো সহ্য না করতে পারা—এসব ক্ষেত্রে Belladonna খুব কার্যকর। সাধারণত হাই ব্লাড প্রেসার বা রক্তসঞ্চালন হঠাৎ বেড়ে গেলে এরকম অবস্থা হয়। Belladonna স্নায়ুতন্ত্রকে ঠান্ডা করে এবং মাথার ভেতরে রক্তচাপের চাপ কমায়। 30C দিনে ১–২ বার খাওয়া যায়। তীব্র উপসর্গ থাকলে চিকিৎসক 200C ও প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
🌿 Nux Vomica
যারা রাতে দেরি করে ঘুমান, অতিরিক্ত কাজ করেন বা বেশি কফি, মশলাদার খাবার খান তাদের মাথা ঘোরার জন্য Nux Vomica দারুণ কাজ দেয়। হজমের গোলমাল, গ্যাস বা অ্যাসিডিটি থেকেও মাথা ঘোরা হতে পারে, তখন এই ওষুধ উপকারী। এটা হজমশক্তি ও স্নায়ুকে ভারসাম্য আনে। সাধারণত 30C দিনে ২ বার দেওয়া হয়। অতিরিক্ত স্ট্রেস বা কাজের চাপে থাকা লোকদের জন্য এটা প্রায় “চয়েস ওষুধ”।
🌿 Arsenicum Album
রোগী যদি খুব দুর্বল হন, সামান্য হাঁটাহাঁটি করলেও ক্লান্ত হয়ে পড়েন আর মাথা ঘোরার সঙ্গে বমি বমি ভাব বা আতঙ্ক থাকে, তখন Arsenicum Album সবচেয়ে ভালো কাজ করে। এটা শরীরের শক্তি ফিরিয়ে আনে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দুর্বলতার কারণে হওয়া ভারসাম্যহীনতা ঠিক করে। সাধারণত 30C দিনে ২ বার ব্যবহার করা হয়। বেশি ক্রনিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শে 200C ব্যবহার করা যেতে পারে।
🌿 Rhus Toxicodendron
যারা বিশ্রাম থেকে হঠাৎ উঠলে মাথা ঘোরা অনুভব করেন, বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠে দাঁড়ালে, তাদের জন্য Rhus Tox ভালো। ঠান্ডা আবহাওয়া বা ভেজা পরিবেশে সমস্যাটা বেড়ে যায়, কিন্তু হালকা নড়াচড়া বা শরীর গরম করলে আরাম হয়। ওষুধটি পেশি ও স্নায়ুর স্টিফনেস কমায়। ডোজ সাধারণত 30C দিনে ২ বার।
🌿 Ferrum Phosphoricum
যদি মাথা ঘোরার কারণ হয় রক্তশূন্যতা বা শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি, তাহলে Ferrum Phos কার্যকর। এটা রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে এবং দুর্বলতার কারণে হওয়া মাথা ঘোরা কমায়। সাধারণত 6X ট্যাবলেট দিনে ৩ বার খাওয়া হয়। এটি একধরনের বায়োকেমিক ওষুধ, তাই নিরাপদও বটে।
🌿 Aconitum Napellus
হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলে, মানসিক শক বা আতঙ্কের পর যদি মাথা ঘোরা শুরু হয়, তাহলে Aconitum খুব ভালো কাজ করে। রোগী হঠাৎ করে আতঙ্কিত বোধ করেন, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় আর মাথা ঘোরে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে দ্রুত আরাম দেয়। সাধারণত 30C দিনে ১–২ বার নেওয়া হয়। তবে তীব্র অবস্থায় চিকিৎসক 200C-ও দিতে পারেন।
🌿 Eupatorium Perfoliatum
যখন মাথা ঘোরা জ্বর বা শরীরব্যথার সাথে হয়, বিশেষ করে ফ্লু বা ভাইরাল ফিভারের সময়, তখন Eupatorium খুব কার্যকর। অনেক সময় রোগী বলেন, মনে হয় হাড় ভেঙে যাচ্ছে, সঙ্গে মাথা ঘোরা আর দুর্বলতা। এই অবস্থায় এটি কাজ দেয়। সাধারণ ডোজ 30C দিনে ২ বার।
🌿 Influenzinum
ফ্লু বা ভাইরাস জ্বর সেরে যাওয়ার পরও অনেকের দীর্ঘদিন মাথা ঘোরা থাকে। দুর্বলতা, মাথাব্যথা আর ক্লান্তি একসাথে থাকে। Influenzinum এই পোস্ট-ভাইরাল সমস্যায় ভালো ফল দেয়। এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ভাইরাসজনিত জটিলতা কাটাতে সাহায্য করে। সাধারণত 200C সপ্তাহে ১ বার নেওয়া হয়।