গর্ভপাত (Abortion/Miscarriage) – কারণ, উপসর্গ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা | Causes, Symptoms & Homeopathy Treatment

গর্ভপাত (মিসক্যারেজ) কী

গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহের আগে ভ্রূণ বা গর্ভস্থ শিশুর নষ্ট হয়ে যাওয়াকে গর্ভপাত (miscarriage) বলা হয়। এটি ইচ্ছাকৃত নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে।

কেন গর্ভপাত হয়

  • ভ্রূণের ক্রোমোজোমের ত্রুটি

  • হরমোনজনিত অসামঞ্জস্য (যেমন প্রোজেস্টেরনের ঘাটতি)

  • জরায়ুর গঠনগত ত্রুটি (ফাইব্রয়েড, সেপটাম ইত্যাদি)

  • সংক্রমণ (TORCH, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন)

  • ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের অসামঞ্জস্য

  • ধূমপান, অ্যালকোহল, মাদক

  • বয়স বেশি হলে বা পূর্বের একাধিক গর্ভপাতের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে

কী কী পরীক্ষা করা হয়

  • আল্ট্রাসাউন্ড (USG) – গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা দেখতে

  • বিটা-HCG ব্লাড টেস্ট – হরমোনের স্তর মাপা

  • সম্পূর্ণ রক্তপরীক্ষা (CBC, থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট)

  • ইনফেকশন স্ক্রিনিং (TORCH, VDRL ইত্যাদি)

  • জরায়ুর গঠন দেখার জন্য সোনোহিস্টেরোগ্রাফি বা HSG

সাধারণ উপসর্গ (বুলেট পয়েন্টে)

  • যোনিপথ দিয়ে রক্তপাত

  • পেটের নীচের অংশে তীব্র ব্যথা বা ক্র্যাম্প

  • গর্ভধারণের আগের উপসর্গ (বমি, স্তনে ব্যথা) হঠাৎ কমে যাওয়া

  • দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা

  • পিঠে বা কোমরে ব্যথা

হোমিওপ্যাথিতে প্রচলিত কিছু ওষুধ

(শুধু শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে – রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসক potency/ডোজ ঠিক করেন)

১. স্যাবিনা (Sabina)

এই ওষুধ সাধারণত গর্ভপাতের পর অতিরিক্ত উজ্জ্বল লাল রক্তপাত এবং কোমর থেকে নিচে টানটান ব্যথার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
এটি জরায়ুর অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ কমাতে ও ব্যথা কিছুটা উপশম করতে সাহায্য করে।
ডোজ/শক্তি: রোগীর অবস্থা দেখে দক্ষ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শক্তি (যেমন 6C, 30C) এবং কতবার খাওয়া হবে তা ঠিক করেন।

২. সেকালে কর্নুটাম (Secale cornutum)

পাতলা, গাঢ় বা দুর্গন্ধযুক্ত রক্তপাত, শরীর দুর্বল, হাত-পা ঠান্ডা – এমন অবস্থায় এটি ব্যবহার করা হয়।
এটি জরায়ুর অনিয়মিত সঙ্কোচন ও অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
ডোজ/শক্তি: শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের পরামর্শে।

৩. কৌলোফাইলাম (Caulophyllum)

বারবার গর্ভপাতের ইতিহাস থাকলে এবং জরায়ু দুর্বল বা সঙ্কোচন যথেষ্ট না হলে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
এটি জরায়ুর পেশি শক্তিশালী করতে সহায়ক বলে ধারণা করা হয়।
ডোজ/শক্তি: চিকিৎসকের পরামর্শে।

৪. সিমিসিফিউগা (Cimicifuga / Actaea racemosa)

মানসিক অস্থিরতা, বিষণ্ণতা বা ভয়, এর সঙ্গে জরায়ুর ব্যথা থাকলে এটি দেওয়া হয়।
এটি মানসিক ও হরমোনগত উপসর্গ কিছুটা সামঞ্জস্য করতে সহায়ক।
ডোজ/শক্তি: চিকিৎসকের পরামর্শে।

৫. আর্নিকা (Arnica montana)

গর্ভপাতের পর শরীর যেন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে এমন ব্যথা, নীলচে ফোলা বা টিস্যুতে আঘাত থাকলে এটি কাজে আসে।
এটি টিস্যুর আরোগ্য ও ব্যথা উপশমে সহায়ক।
ডোজ/শক্তি: চিকিৎসকের পরামর্শে।

৬. আইপেকাকুয়ানহা (Ipecacuanha)

গর্ভপাতের সময় অতিরিক্ত বমি বা বমিভাব ও সঙ্গে রক্তপাত থাকলে এটি ব্যবহার করা হয়।
এটি বমি কমাতে ও রক্তপাতের উপসর্গে আরাম দিতে পারে।
ডোজ/শক্তি: চিকিৎসকের পরামর্শে।

৭. হ্যামামেলিস (Hamamelis)

গাঢ় রঙের রক্তপাত এবং তার পর প্রচণ্ড দুর্বলতা দেখা দিলে এটি দেওয়া হয়।
এটি রক্তনালীর টোন উন্নত করতে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
ডোজ/শক্তি: চিকিৎসকের পরামর্শে।

৮. ভাইবার্নাম অপুলাস (Viburnum opulus)

গর্ভপাতের হুমকি (Threatened abortion), পেটে তীব্র ক্র্যাম্প বা টানটান ব্যথা থাকলে এটি ব্যবহার করা হয়।
এটি জরায়ুর ক্র্যাম্প কমাতে সহায়ক হতে পারে।
ডোজ/শক্তি: চিকিৎসকের পরামর্শে।

৯. আলেট্রিস ফারিনোসা (Aletris farinosa)

বারবার গর্ভপাত হয়, শরীর দুর্বল, অ্যানিমিয়া থাকে – এমন ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হয়।
এটি জরায়ু ও সামগ্রিক শক্তি বাড়াতে সহায়ক বলে ধরা হয়।
ডোজ/শক্তি: চিকিৎসকের পরামর্শে।

১০. ফেরাম ফসফরিকাম (Ferrum phosphoricum)

হালকা রক্তপাতের সঙ্গে অ্যানিমিয়ার উপসর্গ থাকলে এটি ব্যবহার করা হয়।
এটি শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে ও দুর্বলতা কমাতে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
ডোজ/শক্তি: চিকিৎসকের পরামর্শে।

নোট: potency (যেমন 6C, 30C ইত্যাদি) ও সঠিক ডোজ একজন দক্ষ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকই ঠিক করেন। রোগীর ব্যক্তিগত উপসর্গের ভিত্তিতে ডোজ পরিবর্তিত হয়।

Leave a Comment